এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে গবেষকরা জেনে এসেছেন, মস্তিষ্কের কার্যকলাপের যে ধরনগুলো যা আমাদের অভিজ্ঞতা, আশা এবং স্বপ্নকে ব্যাখ্যা করে, তা নির্ভর করে মস্তিস্কের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলগুলো কিভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ওপর। মস্তিস্কের অঞ্চলগুলো ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেলুলার সংযোগের জটিল ওয়েবের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে এই সংযোগ ঘটায়। তবে নতুন একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, জটিল নিউরোনাল সংযোগ নয়, মানব মস্তিষ্কের সামগ্রিক আকৃতিই ঠিক করে দেয়, আমরা কীভাবে চিন্তা করবো, অনুভব করবো এবং আচরণ করবো।
মানব মস্তিষ্কের
কার্যকলাপের ১০ হাজারের বেশি মানচিত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর
মধ্য দিয়ে মস্তিস্কের অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা সহজ হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন
গবেষকরা।
মোনাশ ইউনিভার্সিটির
টার্নার ইনস্টিটিউট ফর ব্রেইন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা করেন। তারা
জানান, গবেষণায় মানুষের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ১০ হাজারের বেশি এমআরআই মানচিত্র
পরীক্ষা করা হয়। গবেষণাটির ফলাফল গত ১ জুন ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। পদার্থবিজ্ঞান,
স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের সম্মিলিত দৃষ্টিকোন থেকে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এর
লক্ষ্য ছিল মস্তিষ্কের জটিল সংযোগের গুরুত্বের ওপর শতাব্দী প্রাচীন মানদণ্ডটি পরিবর্তন
করা যায়, যাতে প্রচলিত ভুল ধারণার পরিবর্তে মস্তিষ্কের আকৃতি ও ক্রিয়াকলাপের মধ্যে
সম্পর্ক শনাক্ত করা যায়।
গবেষণার
প্রধান লেখক এবং টার্নার ইনস্টিটিউট ও মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব সাইকোলজিকাল সায়েন্সেসের
রিসার্চ ফেলো জেমস পাং বলেন, এই গবেষণার ফলাফল তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা,
বিকাশ ও বয়স নিয়ে আমরা কীভাবে অধ্যয়ন করতে পারি তা অনেক সহজ করে দিয়েছেন গবেষকরা।
তিনি বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে মস্তিষ্কের আকৃতির মডেল বিবেচনা করে স্মৃতিভ্রম ও মস্তিস্কের
রক্তক্ষরণের মতো রোগের প্রভাব বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জেমস পাং
বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভেবেছি যে নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা বা সংবেদনগুলো মস্তিষ্কের
নির্দিষ্ট অংশের ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ করে। তবে এই গবেষণা জানালো যে কার্যলাপের কাঠামোবদ্ধ
গঠনগুলো প্রায় পুরো মস্তিষ্কজুড়ে আলোড়িত হয়, ঠিক যেমন সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রগুলো
এক সঙ্গে বেজে উঠে।
এবি/