শরীর বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী ‘জম্বি’ কোষ নিয়ে যা বলছে গবেষণা
শরীর বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী ‘জম্বি’ কোষ নিয়ে যা বলছে গবেষণা

আপনার যকৃত (লিভার) থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত শরীরজুড়ে লুকিয়ে আছে জম্বি-সদৃশ সত্তা যা সেন্সেন্ট সেল বা বৃদ্ধপ্রায় কোষ নামে পরিচিত। সেন্সেন্ট কোষগুলোই মানুষসহ অন্যান্য প্রাণির বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী। এগুলো থেকে বিভাজন প্রক্রিয়ায় আর নতুন কোষের জন্ম হয় না। এগুলো শরীরবৃত্তীয় কোন কাজে অংশ নেয় না, যা এক সময় করেছিল। তবুও এগুলো নিজেদের মৃত্যুকে ঠেকিয়ে দিতে পারে।

এই সব কোষ জৈবিক সংকেত আদানপ্রদান প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকারক উপাদান ছড়িয়ে দেয় যা মানুষের বুদ্ধি ও বিবেচনা শক্তিকে ধীর করে দিতে পারে, শারীরিক দুর্বলতা বাড়িযে দিতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ বাস্তবতা হচ্ছে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরে এগুলোর সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রভাবশালী সাময়িকী নেচারে বুধবার (১৫ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে।  

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গবেষকরা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে এই কোষগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে ধ্বংস বা নির্মূল করা যায় কী না তা জানার চেষ্টা করছেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি বিশদ গবেষণায়, যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার রচেস্টারের মায়ো ক্লিনিক এবং ফ্লোরিডার জুপিটারের স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি দল যৌথভাবে আবিষ্কার করেছে, ডাসাটিনিব এবং কোয়ারসেটিন নামক দুটি যৌগের সংমিশ্রণটি বয়স্ক ইঁদুরের সেন্সেন্ট কোষগুলোকে মেরে ফেলত সক্ষম। 

এমন চিকিত্সা প্রয়োগের ফলে ইঁদুরগুলোর দুর্বলতা কমে গেছে, তাদের হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে সেইসঙ্গে এবং ইঁদুরের দৌড়ানোর সক্ষমতা বেড়ে যায়। 

এই আবিষ্কারটি সেনোলাইটিক্স নামক ওষুধের গবেষণায় নতুন দ্বার খুলে দেয়। প্রাণীর ওপর আরও বেশি গবেষণা এবং মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলে সেনোলাইটিক্স নিয়ে গবেষণায় নতুন মাত্রা উম্মোচিত হয়েছে। 

ইঁদুর এবং বানরের মধ্যে গবেষকরা সংবেদনশীল এই বৃদ্ধপ্রায় কোষগুলোকে মেরে ফেলার জন্য জেনেটিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন।

অন্যরা রোগপ্রতিরোধী সেনোলাইটিক কোষ তৈরিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে বিশ্বে এ বিষয়ে ২০টির মতো ক্লিনিকাল ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক কার্যক্রম) চলছে। 

মস্তিষ্কের রোগ আলঝেইমার, ফুসফুসের রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগসহ বয়স-সম্পর্কিত জটিলতার সঙ্গে লড়াই করার আশায় গবেষকরা এমন সব নতুন ওষুধ পরীক্ষা করছেন যেগুলোর মধ্যে সেনোলাইটিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।

'আমি নিশ্চিত যে সেনোলাইটিক্স চিকিৎসা-বিজ্ঞানে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে,' বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সাউথ সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউনিটি বায়োটেকনোলজির প্রধান নির্বাহী অনির্বাণ ঘোষ। প্রতিষ্ঠানটি সিনোলাইটিক্স তৈরি করছে। আমি মনে করি প্রশ্নটি থেকেই যায়, যে এই বৃদ্ধপ্রায় কোষগুলো আদতে দেখতে কেমন এবং এসব কোষকে রুখে দিতে পারে প্রথম অনুমোদিত ওষুধটিই কী হতে পারে।'

এমএইচ/

নেচার

নেচার

যুক্তরাজ্যের একটি বিজ্ঞান সাময়িকী