জামালপুর সংবাদদাতা, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২৫ জুন ২০২৩ ১১:১৭
ছবি-বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাংবাদিক
গোলাম রাব্বানী নাদিম খুন হয়েছেন। খুনের মামলাও হয়েছে বকশীগঞ্জ থানায়। মামলার বাদী নিহত
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত
২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামিসহ ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সাংবাদিক নামি খুনের কারণ : বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান
মাহমুদুল আলম বাবু প্রথম স্ত্রী রেখে সাবিনা বেগম নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। মাহমুদুল
আলম বাবু ও সাবিনা বেগমের দাম্পত্য জীবনে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। সাংসারিক জীবনে
বনিবনা না হওয়ায় চলতি বছরের মে মাসে মাহমুদুল আলম বাবু তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা বেগমকে
তালাক দেন। তালাকের বিষয়টি মানতে নারাজ বাবুর স্ত্রী সাবিনা বেগম। সাবিনা বেগম এর বিচার
দাবি করে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনের
নিউজটি অন্য সাংবাদিকের মতো গোলাম রাব্বানী নাদিমও প্রকাশ করাসহ নিজের ফেসবুক আইডিতে
একাধিক পোস্ট করেন। এ কারণে নাদিমের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আরম বাবু
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নেননি। ১৩
জুন মামলাটি খারিজ হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ হন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। এর সূত্র
ধরেই খুন হয় নাদিম।
যেভাবে খুন হয় সাংবাদিক নাদিম : ১৪ জুন রাত অনুমান পৌনে ১০টা।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম তার নিজ দোকানে কাজ শেষ করে মোটরসাইকেলে করে নিজ বাসায়
ফিরছিলেন। তিনি বকশীগঞ্জ কলেজ মোড় বা পাটহাটি এলাকায় আসার পরেই সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক
গোলাম রাব্বানী নাদিমের ওপর হামলা করে। স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে
বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ তাকে জামালপুর হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে
ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুন দুপুরে
সাংবাদিক নাদিম মারা যান।
মামলার আগেই গ্রেপ্তার হন ১০ জন : সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের
মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ তৎপর হয়ে সন্দেহভাজন কফিল,
ফজলু মিয়া, শহী, মকবুল, ওহিদুজ্জামান, তোফাজ্জল, আইনাল ও এজাহারে উল্লেখ গোলাম কিবরিয়া
সুমনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি চেয়ারম্যান
মাহমুদুল আলম বাবু, মনিরুল ও জাকিরুলকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। অপর আসামি
রেজাউল করিমকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের একটি টিম।
মামলার এফআইআর এ যা আছে : দাফন-কাফনের ঝামেলা শেষ করে আইনগত
পরামর্শ নিয়ে ১৭ জুন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলা দায়ের হয় বকশীগঞ্জ থানায়। মামলার বাদী নিহত সাংবাদিক গোলাম
রব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম। মামলার নামীয় আসামি ২২ জন। অজ্ঞাতনামা আসামি ২০-২৫
জন। এ পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামিসহ ১৩ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ১৩ জনের মধ্যে নামীয়
আসামি ৪ জন। সন্দেহমূলক গ্রেপ্তার ৯ জন। মামলাটি বকশীগঞ্জ থানায় দায়ের হলেও বর্তমানে
মামলার তদন্ত করছে জামালপুরের ডিবি পুলিশ। রিমান্ড শেষ হওয়ার পর ১৩ আসামি বর্তমানে
জামালপুর কারাগারে আছেন। অন্য নামীয় আসামিরা পলাতক।
মামলায় যাদের আসামিরা হয়েছে তারা হলেন- বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালেরবার্তি
গ্রামের সাহেদুল হকের ছেলে মাহমুদুল আলম বাবু (৫০), বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত (২২),
জমি শেখের ছেলে রেজাউল করিম (২৬), নামাপাড়া গ্রামের ননির ছেলে এম ডি রাকিবিল্লাহ রাকিব (২৮),
আরচাকান্দির গাজী আমর আলী মেম্বার (৫৫), কাগমারীপাড়া গ্রামের সাফিজল হকের ছেলে শরীফ
মিয়া (২২), উত্তর বাজারের আনার আলীর ছেলে গোলাম কিবরিয়া সুমন (৪৩), পশ্চিমনামাপাড়ার খোরশেদ
মণ্ডলের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন মণ্ডল (৩৫), উত্তর বাজারের ফরহাদ হোসেন ফক্কার ছেলে খন্দকার শামীম (৪০), মালিরচর
নয়াপাড়ার মিলন মিয়া (২১), মালিরচর তকিরপাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে লিপন মিয়া (৩০), পূর্ব
কামালেরবার্তি গ্রামের মফিজল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (৩৫), নামাপাড়ার শেখ ফরিদ (৩০),
টাঙ্গারীপাড়ার কামালের ছেলে ওমর ফারুক (৩২), বটতলী সাধুরপাড়ার আবুল কালামের ছেলে রুবেল
মিয়া (৩৫), খেতারচর দক্ষিণপাড়ার জহুরুল হকের ছেলে সুরুজ মিয়া আইড়মারি শান্তিনগরের জলিলের
ছেলে বাদশা মিয়া (৩৬), মদনেরচরের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ (২৮), আরচাকান্দির মজিবুর
রহমানের ছেলে ইমান আলী (৩৩), কুতুবের চরের সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম (৫০) ও সূর্যনগর
গ্রামের কারিমুল মাস্টারের ছেলে আমান উল্লাহ (৩০)।
মামলার মোট সাক্ষী ৫ জন : সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলায় মোট ৫ জনকে সাক্ষী মানা হয়েছে। সাক্ষীরা হলেন- সাধুরপাড়া গ্রামের হেদায়েত উল্লাহর ছেলে সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু (৩৩), পুরাতন গরুরহাটি বাবুল মেকারের ছেলে সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন (৩২), পশ্চিমনামাপাড়ার কুব্বাত আলীর ছেলে মাহবুবুর রহমান ময়ুর (৫৩), কাচারিপাড়ার আজিম উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে আলী আকবর (৫০) ও উত্তর বাজারের হেদায়েত উল্লাহর ছেলে মনিরুল্লাহ রোকন (৩৫)।
জেবি/এইচআই