নিজস্ব প্রতিবেদক, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
৩১ মে ২০২২ ১০:৩৫
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২২তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হবে আগামী ২ জুন বৃহস্পতিবার। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হবে ৪ জুন। উদীচীর এবারের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আলোচিত বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল। আজ মঙ্গলবার (৩১ মে) রাজধানীর তোপখানা রোডের উদীচী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে
লিখিত বক্তব্য দেন উদীচী’র কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। তিনি
জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ৪টায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে
উদীচীর জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এবারে সম্মেলনের মূল
স্লোগান হলো- ‘শ্রেণিভেদ ভাঙি শোষিতের রোষে, সম্প্রীতির
মালা গাঁথি ভেদাভেদ নাশে’।
জামসেদ আনোয়ার
তপন বলেন, ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কারা নির্যাতিত
বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল। অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, সাহিত্যিক
ও গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. জাফর ইকবাল এবং সম্মিলিত
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এবারের সম্মেলনে উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
ও সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদুকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মুন্সিগঞ্জের
স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে সম্মেলনের উদ্বোধক করার প্রসঙ্গে উদীচীর সাধারণ
সম্পাদক বলেন, নির্যাতিত এই বিজ্ঞান শিক্ষককে সম্মান জানাতে তাকে দিয়ে সম্মেলন
উদ্বোধন করানো হচ্ছে। হৃদয় মণ্ডল কোনও ব্যক্তি নন। তাকে আমরা প্রতীক হিসেবে দেখি।
তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বিজ্ঞান মনস্কতা, উগ্রতার বিরুদ্ধে মননশীলতার প্রতীক।
নির্যাতিত এই বিজ্ঞান শিক্ষক আসবেন, আমাদের উজ্জীবিত করবেন।
জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, তিনি যে সাহস ও অনমনীয়তা
দেখিয়েছেন, সেটা আমাদের উজ্জীবিত করে। এখনও সমাজে এমন ধরনের মানুষ রয়েছেন, শিক্ষক
রয়েছেন; যারা তাদের ছাত্রদের শেখাচ্ছেন। তাদের মর্যাদা দেওয়া ও সম্মান দেখানো
রাষ্ট্রের ও আমাদের দায়িত্ব।
সংবাদ সম্মেলনে
জানানো হয়, ২ জুন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর একটি শোভাযাত্রা বের করা হবে। পরে
সন্ধ্যায় মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। ৩ ও ৪ জুন সকাল
নয়টা থেকে সাংগঠনিক অধিবেশন এবং সন্ধ্যা সাতটা থেকে মঞ্চস্থ হবে সাংস্কৃতিক
পরিবেশনা। এবারের সম্মেলনে দেশ ও বিদেশের শাখা মিলে প্রায় ১২শ শিল্পীকর্মী প্রতিনিধি
হিসেবে অংশ নেবেন। দীর্ঘ দুই বছরের করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের সম্মেলনে উপস্থিতি
সীমিত রাখা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, বাংলাদেশ আর
মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নেই। মুক্তিযুদ্ধের মৌল আকাঙ্খা ছিল শোষণমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ
ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞাননির্ভর সমাজ ও ন্যায়ভিত্তিক
অর্থব্যবস্থা গড়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তার কিছুই গড়ে উঠেনি। হাজার বছরের
মাটিবর্তী সহজিয়া আচার-বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিপূর্ণ সামাজিক
ব্যবস্থা থেকে মানুষকে বিচ্যুত করে ধর্মনিয়ন্ত্রিত গোঁড়াবাদী সংস্কৃতির দিকে ধাবিত
করা হচ্ছে। এমনকি ধর্মের যেসব প্রগতিশীল উপাদন ধর্মের মহিমাকে মানব মননে স্থান
দিতো সেসব উপাদানও বাতিল ঘোষণা করে সম্পূর্ণ শেকড়হীন, আত্মপরিচয়হীন করে তোলা হচ্ছে
মানুষকে।
জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, প্রগতিশীল সাহিত্য, গান, নাটক,
সিনেমাসহ নানা সাংস্কৃতিক তৎপরতা প্রতিমুহূর্তে বাধার মুখে পড়ছে। একদিকে নারীকে
পণ্য হিসেবে সর্বত্র উপস্থাপনের ভোগবাদী প্রবণতা, অপরদিকে নারীকে বন্দি রাখার চরম
পুরুষতান্ত্রিক ও ধর্মীয় প্রবণতা হাতে হাত ধরে চলছে। নারীর পোশাক, রুচি, শিক্ষা ও
স্বাধীনতা নিয়ে ঘৃণ্য মোরাল পুলিশিং আজ সামাজিক বৈধতা পেয়েছে এবং সাংস্কৃতিক আবহকে
নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই সাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক
আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাল্টা মানবিক সংস্কৃতির আধিপত্য গড়ে তোলা ছাড়া আমাদের মুক্তি
অসম্ভব।
আরকে/টিটি