কনটেন্ট ক্রিয়েটর

বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর


০৭ মে ২০২২ ০৪:১২



চার কারণে চড়া সয়াবিনের বিশ্ববাজার

কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর

০৭ মে ২০২২ ০৪:১২

চার কারণে চড়া সয়াবিনের বিশ্ববাজার

সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন করে বাড়তে শুরু করে গেল ডিসেম্বর থেকে। এরপর চার মাসের ব্যবধানে দাম বাড়ে ৩৮ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ে ২৯ শতাংশ। সয়াবিন তেলের বাজারে এই অস্থিরতা চলছে মূলত চার কারণে- ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ; খরার কারণে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের উৎপাদন কমে যাওয়া; ইন্দোনেশিয়ার পামঅয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া এবং চাহিদা বেড়ে যাওয়া। এর বাইরে মূল্যস্ফীতির প্রভাবও কিছুটা আছে।

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

বিশ্বে সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের তালিকায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের অবস্থান সবার উপরে। বিশ্বে মোট উৎপাদিত সূর্যমুখী তেলের ৫০ শতাংশই আসে এই দুটি দেশ থেকে। আর ভোজ্যতেল হিসেবে ইউরোপের দেশগুলোতে এই তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে এই তেলের সরবরাহ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ফলে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই সয়াবিন তেলের দিকে ঝুঁকেছেন।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় খরা

বিশ্বে সয়াবিন উৎপাদনের তালিকায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়। বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়, তার ৬৫ শতাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে। এ বছর খরার কারণে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। আর্জেন্টিনা সরকার জানিয়েছে, খরার কারণে তাদের সয়াবিনের উৎপাদন এবার ১০ শতাংশ কম হয়েছে। অন্যদিকে বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ট্রিজ’ এর হিসাব বলছে, ২০২১ সালের মে মাসে ব্রাজিল যে পরিমাণ সয়াবিন রপ্তানি করেছিল, চলতি মাসে তা ৮০ লাখ টন (৪৩ শতাংশ) কমিয়ে দিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার পামওয়েল রপ্তানি বন্ধ

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পামঅয়েল উৎপাদন হয় ইন্দোনেশিয়ায়। প্রতিবছর যে পরিমাণ পামঅয়েল উৎপাদন হয়, তার ৬০ শতাংশই ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে। সেখানে প্রতিবছর প্রায় চার কোটি ৬০ লাখ টন পামঅয়েল উৎপাদন হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত মাসে পামঅয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় জাকার্তা। এর প্রভাব পড়ে সয়াবিনের বাজারে।

চাহিদা বেড়ে যাওয়া

করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক হোটেল-রেস্তেরাঁই বন্ধ ছিল। মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ‘নতুন স্বাভাবিকতায়’ (নিউ নরমাল) ফিরতেই ভোজ্যতেলের চাহিদা বেড়ে যায়। অন্যদিকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খরার কারণে কমে যায় উৎপাদন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে সয়াবিনের উৎপাদন খরচও। সবকিছু মিলিয়ে দাম বাড়ছে সয়াবিন তেলের।

বাংলাদেশ ও বিশ্ববাজারের তুলনামূলক চিত্র

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১২০ টাকা ৯১ পয়সা। একই মাসে বাংলাদেশের বাজারে এই দাম ছিল ১৫৩ টাকা। বিশ্ববাজারে পরের মাসে লিটার প্রতি দাম বাড়ে আট টাকা। নভেম্বরে গিয়ে আবার চার টাকা কমে দাঁড়ায় ১২৪ টাকায়। ডিসেম্বরে ছিল ১২১ টাকা। গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশে এক লিটার সয়াবিনের দাম ছিল ১৬০ টাকা। মূলত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে থাকে। জানুয়ারির লিটারপ্রতি ১২৭ টাকা ফেব্রুয়ারিতে ১৩৭ টাকায়, মার্চে ১৬৯ টাকায় এবং এপ্রিল মাসে ১৬৮ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ, চার মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশ।

সূত্র : ম্যাক্রোট্রেন্ডস, ট্রেডিং ইকোনোমিকস, বিবিসি।

এএল/জেডএস