উজ্জল হোসেন, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
০৮ মে ২০২২ ০১:৩৩
সৌদি আরবের নির্মাণাধীন নিওম সিটি। ছবি : টুমোরোডটসিটি
বিশ্বের
বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে খাল খনন যেমন আছে, আছে আধুনিক শহর কিংবা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার
বিশাল কর্মযজ্ঞও। আছে বিনোদন পার্ক কিংবা মহাকাশ স্টেশন তৈরির প্রকল্পও। ‘অক্সফোর্ড
হ্যান্ডবুক অব মেগাপ্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট’ বলছে, ১০০ কোটি কিংবা তার চেয়ে বেশি ডলারের
যেকোনো প্রকল্প মেগাপ্রজেক্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। বেঙ্গল নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে
ধরা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচ মেগাপ্রজেক্ট-
নিওম
সিটি
নিওম অর্থ ‘নতুন
ভবিষ্যৎ’। সৌদি আরবের নির্মাণাধীন একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পকে অনেকে ‘লিভিং
ল্যাবরেটরি’ও বলেন। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শহর, বন্দর, আবাসিক ও বাণিজ্যিক
এলাকা। থাকবে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট’। যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে
পানির অক্সিজেন থেকে হাইড্রোজেনকে পৃথক করা হয়, তখন সেটিকে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ বলা
হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ‘এয়ার প্রোডাক্টস অ্যান্ড কেমিক্যালস’ জানিয়েছে, এই প্ল্যান্ট
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ‘গ্রিন হাইড্রোজেন প্ল্যান্ট’। নিওম সিটিতে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। এর কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।
প্রকল্পের ব্যয় ৫০ হাজার কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ লাখ কোটি টাকা।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর এই প্রকল্পের ঘোষণা দেন।
পরের বছর এ প্রকল্পে কিছু জমি দেওয়ার ঘোষণা দেয় মিসর।
দ্য গালফ
রেলওয়ে
‘দ্য গালফ রেলওয়ে’
প্রকল্প। এটি ‘জিসিসি’ নামেও পরিচিত। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) ছয় সদস্য
রাষ্ট্রকে সংযুক্ত করবে প্রকল্পটি। দেশগুলো হলো, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন,
ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। গালফ রেলওয়ের দৈর্ঘ্য দুই হাজার ১৭৭ কিলোমিটার। ২০১৮
সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তেলের দাম কমে যাওয়া এবং সদস্য
রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২৫ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে
যায়। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী, প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ (সৌদি আরব থেকে সংযুক্ত আরব
আমিরাত হয়ে ওমান) শেষ হবে ২০২৩ সালে। আর দ্বিতীয় ধাপে সৌদি আরব হয়ে কুয়েত ও
বাহরাইন অংশের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের মধ্যে।
সিল্ক সিটি
কুয়েতের একটি মেগাপ্রকল্প ‘সিল্ক সিটি’। এই প্রকল্পটি
চীনের ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ একটি
অংশ। এটি ২৫০ বর্গকিলোমিটারের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনেই তৈরি হবে ২৩৪ তলা
বিশিষ্ট বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘বুর্জ মুবারক আল কবির’। আল কবির টাওয়ারের উচ্চতা
হবে ১০০১ মিটার (প্রায় এক কিলোমিটার)। আরব্য রজনীর ‘এক হাজার এক রাতের’ গল্প (আলিফ
লায়লা) ও মরুবৃক্ষের জীবনগাথায় উদ্বুদ্ধ হয়েই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই মেগা
প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর, আবাসিক হোটেল, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বিনোদন পার্ক থাকবে।
১৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে অন্তত ২৫ বছর।
কিং আব্দুল্লাহ
ইকোনোমিক সিটি
এটি সৌদি
আরবের একটি মেগাপ্রকল্প। এর নামকরণ হয়েছে প্রয়াত বাদশা আব্দুল্লাহর নাম অনুসারে। ২০০৪
সালে সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ প্রকল্পটি ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পে মূলত
শিক্ষা ও ব্যবসার প্রসারে জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, জাকজমকপূর্ণ এই শহরটি যুক্তরাষ্ট্রের
ওয়াশিংটনের চেয়েও বড় শহর হবে। লোহিত সাগরের উপকূলেই গড়ে তোলা হবে এই মেগাপ্রকল্পটি।
আয়তন হবে ১৭৩ বর্গকিলোমিটার। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৯ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নের
দায়িত্বে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি ‘এমার প্রোজেক্টস’। প্রকল্পের ব্যয় ধরা
হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার।
দিল্লি-মুম্বাই
ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর
দিল্লি-মুম্বাই
ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর এখন পর্যন্ত ভারতের সব থেকে সুদূরপ্রসারী প্রকল্প। পাঁচটি বিদ্যুৎ
কেন্দ্র, আটটি স্মার্ট সিটি, ২৪টি বিনিয়োগ অঞ্চল ও দুটি বিমানবন্দরের পাশাপাশি প্রকল্পটিতে
থাকছে অন্যান্য অবকাঠামোও। ভারত ও জাপান সরকারের একটি যৌথ প্রকল্প এটি। প্রকল্পের কাজ
শুরু হয় ২০০৬ সালে। ১০ হাজার কোটি ডলারের চার ধাপের এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে
২০৩৭ সালে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে ভারতের ‘দ্য ডেডিকেটেট ফ্রেইট করিডোর করপোরেশন
অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’।
সূত্র :
সিআর।
ইউএইচ/আরএ/