সালাহ্উদ্দিন শুভ, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪৫
ছবি: বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
শত বছর ধরে হাওরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে দুটি আমগাছ। রোদ-ঝড় বৃষ্টি সবকিছু মাড়িয়ে টিকে আছে এখনো। শত বছর আগে চৈত্র মাসের এক দুপুর ছায়ার আশায় গাছ দুটি রোপণ করেছিলেন এক কৃষক। আজ এই গাছ দুটি এখন কৃষকদের ছায়াবৃক্ষ। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কাগজি বাড়ি নামে জায়গাটিতে সবুজ ছাতার মতো গাছ দুটি এখনো দাঁড়ানো। এখানে একসময় হয়তো বাড়ি ছিল গাছও ছিল। এখন আর বাড়ি নেই। অন্য সঙ্গী-সাথীদের হারিয়ে শুধু এই গাছ দুটো টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
স্থানীয়রা
জানান, কাউয়াদীঘি হাওরের বুকে শত বছর আগে লাঙল দিয়ে আমনের জমিতে চাষ করছিলেন অল্প
বয়সী এক কৃষক। সারা শরীর তার রোদে পুড়ছে। একটুখানি ছায়া খুঁজছিলেন, কিন্তু কোথাও এক
টুকরা ছায়াও নেই। না আছে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ, না আছে কোনো গাছ। সে রকম মুহূর্তে যুবক কৃষক ঠিক করলেন, এই খোলা প্রান্তরে গাছ রোপণ করতে হবে। সেই গাছের ছায়ায় বসে
একটুখানি জিরিয়ে নেবেন কৃষক, বিলে-ঝিলে থাকা জেলে, গরু-মহিষ চরানো রাখাল। একদিন আমগাছের
কয়েকটি চারা পুঁতে দিলেন একচিলতে উঁচু ভিটায়। তার পুঁতে দেওয়া গাছের চারাগুলো হাওরের
ঝড়ো বাতাসকে বুকে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াল।
কাউয়াদীঘি
হাওরের কাগজি বাড়িতে যাওয়ার পথে গ্রামের মধ্যে বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে দেখা। বলতে
থাকেন গাছ দুটির জন্মের কথা। একাটুনা ইউনিয়নের হাতিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি এই আমগাছ দুটি রোপণ করেছিলেন। মূলত, এই স্থানটিতে কোনো গাছ ছিল না। যারা কৃষিকাজ করতেন, মাছ ধরতেন,
গরু-মহিষ চরাতেন, তারা যাতে প্রখর রোদে গাছের নিচে বসে একটু ছায়া পান, বিশ্রাম নিতে
পারেন এটাই ছিল তার ইচ্ছা। হাতিম মিয়া প্রায় ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তা-ও প্রায়
৩০ বছর আগে।
ওই গ্রামের
কৃষক আলমগীর বলেন, শত বছর আগে জমি চাষ করতে গিয়ে রোদে ধরেছিলে কৃষক হাতিম মিয়ার। কোনো
ছায়া ছিল না। তাই এই গাছ রোপণ করেন। আজ এই গাছের নিচে বসে এখন ছায়া পাই। ছাতা হিসেবে
কাজ করে। গাছ দুটি এখনো সজীব প্রাণ। প্রতিবছরই আম ধরে। গাছের আশপাশে এখন শূন্য হাওর। হাওরের
বুকে জল শুকিয়েছে। কৃষকরা ধান কেটে এই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। বাতাস এলে গাছের
পাতা মৃদু কোলাহলে নীরবতা ভাঙছে। সন্ধ্যা নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পাখিদের দল। এভাবেই
শত বছর ধরে মানুষকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে গাছ দুটি।
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, ‘এখানে যারা বিশ্রাম নেন, তারা শুধু ছায়ার সুখই পান না। আম খেতে পারেন। এ এক অন্য রকমের শান্তি ও স্বস্তি। এখানে হয়তো কেউ ফেলে আসা সময়ের পাঠ্য কিছু লিখে রাখেনি। দিগন্তের কাছে একলা দাঁড়ানো গাছ দুটোই শত বছরকে ধরে আছে নীরবে। গাছের বিভিন্ন অংশ পচন ধরেছে। যদি পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা এদিকে নজর দেন তবে গাছ দুটিকে রক্ষা করা যাবে। নয়তো হঠাৎ ভেঙে পড়ে যাবে।’
ইউএইচ/