কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
১৩ মে ২০২২ ০২:০৭
প্রতীকী ছবি
বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায়
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মরণব্যাধি ক্যান্সার। ‘ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ড ইন্টারন্যাশনালের’
(ডাব্লিউসিআরএফ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের দেহে ক্যান্সার
ধরা পড়ে। একই বছর ক্যান্সারে মৃত্যু হয় প্রায় এক কোটি মানুষের। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়
ক্যান্সারে।
‘আমেরিকান
ক্যান্সার সোসাইটির’ গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি বছর ক্যান্সারের কারণে অকাল মৃত্যু
কিংবা কর্মক্ষমতা হারানোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯০ হাজার কোটি ডলার, যা বৈশ্বিক
জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ। যদিও গবেষকরা বলছেন, খাদ্যাভাস ও কায়িক পরিশ্রম বাড়ানোর মাধ্যমে
অন্তত ৪০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ক্যান্সার
হলো একটি অনিয়ন্ত্রিত কোষ, যা শরীরের যেকোনো অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি ‘ম্যালিগন্যান্ট
টিউমার’ ও ‘নিওপ্লাজম’ নামেও পরিচিত। কান্সারের সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অস্বাভাবিকভাবে
কোষের বৃদ্ধি ঘটায়, যা একপর্যায়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ার এই
পর্যায় কিংবা প্রক্রিয়াকে ‘মেটাস্টেসিস’ বলা হয়। এই মেটাস্টেসিসের কারণেই মূলত মৃত্যু
ঘটে। এখন পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ বেশির ভাগ সময়ই ক্যান্সার
দেরিতে ধরা পড়ে, যখন আর চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যু ঠেকানো যায় না। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ধরনের ক্যান্সার
শনাক্ত করা গেছে। এসব ক্যান্সারের চিকিৎসাপদ্ধতিও আলাদা।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যু স্তন ক্যান্সারে
পৃথিবীতে ২০২০ সালে ক্যান্সারে
আক্রান্ত হয়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যাই
ছিল সবচেয়ে বেশি, ২২ লাখ ৬০ হাজার (মোট মৃত্যুর সাড়ে ১২ শতাংশ)। এর পরেই আছে ফুসফুস
ক্যান্সার। ডাব্লিউসিআরএফ-এর হিসাব অনুযায়ী,
এই ক্যান্সারে ২০২০ সালে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যা মোট মৃত্যুর
১২ দশমিক ২ শতাংশ। মৃত্যুর হিসাবে এর পরেই
আছে যথাক্রমে মলদ্বার ক্যান্সার (মোট মৃত্যুর ১০ দশমিক ৭ শতাংশ), প্রোস্টেট ক্যান্সার
(৭ দশমিক ৮ শতাংশ) ও পাকস্থলির ক্যান্সার (৬ শতাংশ)।
পুরুষের আক্রান্তের হার বেশি
২০২০ সালে প্রতি এক লাখ মানুষের
মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন গড়ে ১৯০ জন। এ ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্তের
হার বেশি। প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ২০৬ দশমিক ৯ জন। নারীর
ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১৭৮ দশমিক ১ জন। আর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি
ডেনমার্কে, লাখে ৩৩৪ দশমিক ৯ জন। এর পরেই আছে আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্স। ডাব্লিউসিআরএফ-এর তথ্য অনুযায়ী,
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি মঙ্গোলিয়ায়, লাখে ১৭৫ দশমিক ৯ জন।
প্রতিরোধে করণীয়
জীবনযাপনের
ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনলেই ক্যান্সার প্রতিরোধ অনেক সহজ হয়ে যায়। যেমন- তামাক পরিহার
করতে হবে; ওজন রাখতে হবে বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী। সুষম খাদ্য গ্রহণে নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত
ফল ও শাকসবজি খেলেও অনেক ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কায়িক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। অ্যালকোহল
সেবনের মাত্রা কমাতে হবে; ছেড়ে দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং এইচপিভির
টিকা নেওয়া থাকলেও উপকার মিলবে। অতিবেগুনী রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে।
কেএন/এএল