রিপন কর্মকার, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
০৬ আগস্ট ২০২২ ১১:৩৭
ছবি: রিপন কর্মকার
সারাদিন রাজধানীতে
গণপরিবহনের সংকট দেখা গেছে। অঘোষিত ভাবে অনেক বাস চলাচল বন্ধ ছিল আজ। জ্বালানি তেলের
দাম বৃদ্ধিতে বাস মালিকরা চাইছেন তেলের দামের সাথে ভাড়ার সমন্বয় সাধন। গণপরিবহন কম
চলাচল করায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অল্প সংখ্যক বাস চলছে, সেগুলোতে অতিরিক্ত
ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করছেন যাত্রীরা। যদিও রাজধানীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানির সরবরাহ
স্বাভাবিক বলে জানা যায়। তবে নতুন দামে জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে। গ্রাহকরা তেল পাচ্ছেন
চাহিদা মতই। রাজধানীর ফিলিং স্টেশনগুলোয় ঘুরে
এ চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর মেঘনা
মডেল সার্ভিস সেন্টার ফিলিং স্টেশনে অকটেন নিতে আসনে বাইকচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন,
তেল যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। তেলের সংকট দেখলাম না। কিন্তু ৮৯ টাকার অকটেন নিলাম ১৩৫
টাকা দিয়ে। নতুন দামটা বেশি হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এত টাকা বেশি দাম বাড়ানোতে আমাদের উপর
চাপ পড়েছে। আমাদের আয় তো বাড়েনি।
সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, ফার্মগেট, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী, গাবতলী, টেকনিক্যাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেক যাত্রী। কিন্তু বাসের দেখা মিলছে কম। একেকটি গাড়িতে উঠতে যাত্রীদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। গণপরিবহনের আশা ছেড়ে কেউ কেউ বিকল্প যানবাহন খুঁজছেন।
বিকালে সাইন্সল্যাব,
কলাবাগান, আসাদগেট এলাকাতেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। এসব এলাকায় গণপরিবহনের স্বল্পতা ছিল
লক্ষণীয়।
শিক্ষার্থী আবির
মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, আমি যাত্রাবাড়ি থেকে কলাবাগান আসার সময় দেখি বাস নেই। বাসগুলো
দাড়িয়ে আছে, ভেতরে ড্রাইভার হেল্পার শুয়ে বসে আছে। যাবে কিনা যানতে চাইলে বলে, ভাড়ার
ফয়সালা না হলে গাড়ি ছাড়ব না। তারপর অন্য রুটের এক বাসে দশ টাকা বেশি দিয়ে এসেছি।
রাসেল স্কয়ারের
সিগনালে সাভার যাওয়ার জন্য ত্রিশ মিনিট থেকে দাড়িয়ে আছেন মো. বাদল। পেশায় আসবাব মেরামতকারী।
তিনি বলেন, সাভার থেকে আসার সময় দেড় ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকে বাস পেয়েছি। এখন আবার যাওয়ার
জন্য আধা ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি। এর মধ্যে অবশ্য কয়েকটি বাস গেছে কিন্তু জায়গা নেই।
টেকনিক্যাল মোড়ে
দেখা গেছে, মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে সদরঘাট পথে চলাচলকারী তানজিল পরিবহনের একটি বাসে
চালকের সহকারী যাত্রীদের উদ্দেশে বলছেন, ‘ফার্মগেট ২৫, গুলিস্তান ৪০’। জানা যায়, গতকাল
পর্যন্ত এই দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হয়েছে ১৫ ও ২৫ টাকা।
পরিবহন শ্রমিকরা
বলছেন, হঠাৎ করে শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় রাস্তায় বাস নামাচ্ছেন না
পরিবহন মালিকরা। তারা পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে যাত্রীরা
ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ না করে জ্বালানির দাম বাড়ানোতে
এই সংকট তৈরি হয়েছে। মালিকরা এভাবে পরিবহন সংকট তৈরি করেছেন। ভুগছেন জনসাধারণ।
চট্টগ্রাম
এদিকে জ্বালানির
দামের সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি চলছে না চট্টগ্রামেও। শনিবার
সকাল থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক সমিতি। একই
কারণ দেখিয়ে অনেক আন্তঃজেলা পরিবহনও রাস্তায় নামছে না।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতিক্রিয়া
জ্বালানি তেলের
দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। হঠাৎ জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে
জনজীবনে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এমনিতে দ্রব্যমূল্যের বেসামাল ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। তার
ওপর গত মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকার
অধিকারটুকুও হারাতে বসেছে।’
জ্বালানি তেলের
দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সিপিবি রাজধানী ঢাকা ও দেশের ২৫ টি জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
শনিবার রাজধানীর পল্টনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন
বলেন, ‘তেলের দাম বাড়লে যাতায়াতসহ সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে অর্থনীতিতে চাপ পড়বে।
বিপর্যস্ত হবে জনজীবন।’
জ্বালানি তেলের
দাম বাড়ানোর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)
ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের নেতারা। তারা বলছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম
৫১ শতাংশ বাড়ানোর ফলে সাংবাদিক সমাজ ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে।’ শনিবার (৬ আগস্ট) বিএফইউজে
ও ডিইউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় ৯৯ শতাংশ সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনে মোটরসাইকেল
বা গণপরিবহন ব্যবহার করেন। এই খাতে ৫০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকে
দুরূহ ও ব্যয়বহুল করে তুলবে।’
এদিকে মানুষের আশু
ভোগান্তির কথা স্বীকার করেছেন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০২১-২২
অর্থবছরে সরকার জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫৩ হাজার কোটি টাকা
ভর্তুকি দিয়েছিলো। তিনি জানান, দেশের পক্ষে বর্তমানে এভাবে ভর্তুকি দেওয়া সম্ভবপর নয়।
এতে সাধারণ মানুষের কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। কেননা বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে
বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে তিনি সংযুক্ত
আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপালের চেয়ে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য
কম বলে মন্তব্য করেন।
পরিবহন মালিক-বিআরটিএ বৈঠক সমাপ্ত
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণে বাস মালিক সমিতির সাথে আজ বিকেল ৫ টায় বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ বৈঠক রাত ৯টায় শেষ হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারসহ পরিচালক (প্রশাসন) মো: আজিজুল ইসলাম, পরিচালক (অপারেশন) মো: লোকমান হোসেন মোল্লা, সচিব এ টি এম কামরুল ইসলাম।
পরিবহন মালিক সমিতির
পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন
অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
বৈঠকে ভাড়া সমন্বয়
নিয়ে আলাপ শেষে ফলাফল গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ল ৪০ পয়সা। অর্থাৎ কিলোমিটারে ২২
শতাংশ বেড়েছে। আগের ভাড়া ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা। ৪০ পয়সা বেড়ে হয়েছে, ২ টাকা ২০ পয়সা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাড়ল ৩৫ পয়সা। নতুন ভাড়া করা প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা।
আগে যা ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা। রবিবার (৭ অগাস্ট) থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হবে।
/এইচকে