কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২১ মে ২০২২ ১১:২১
প্রতীকী ছবি
কোভিড মহামারি
থেকে এখনো মুক্ত হতে পারেনি বিশ্ব। এর মধ্যে ‘মাঙ্কিপক্স’ নামের বিরল একটি রোগ ছড়িয়ে
পড়তে শুরু করেছে। আফ্রিকা থেকে ছড়ানো এই রোগ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন ও পর্তুগালে
পৌঁছে গেছে। তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয়
বনাঞ্চলে। এ রোগের সংক্রমণকে অনেকে উদ্বেগজনকভাবে দেখছেন। আসলে কতটা উদ্বেগজনক এই মাঙ্কিপক্স
ভাইরাস?
মাঙ্কিপক্স
ভাইরাস কী
চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। তবে এর
ক্ষতিকর প্রভাব কম এবং সংক্রমণের হারও কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণীদেহের মাধ্যমে এই
ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ইঁদুরের মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে
পারে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ জানায়, সাধারণত এ রোগে শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়
এবং অধিকাংশ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
মাঙ্কিপক্সের
ধরণ
মাঙ্কিপক্স
দুই ধরনের হয়ে থাকে- মধ্য আফ্রিকান এবং পশ্চিম আফ্রিকান। ব্রিটেনে এই ভাইরাসে যে দুজন
সংক্রমিত হয়েছেন, তারা সম্প্রতি নাইজেরিয়া সফর করেছেন। তারা পশ্চিম আফ্রিকা ধরনের
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তি একজন
স্বাস্থ্যকর্মী। ধারনা করা হচ্ছে, তিনি রোগীর কাছ থেকে এই ভাইরাস পেয়েছেন।
যেভাবে
সংক্রমণ ছড়ায়
বিশেষজ্ঞরা
প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলেন যে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে সংক্রমণ বাড়তে
পারে। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরের
প্রবেশ করতে পারে এই ভাইরাস। কিন্তু সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট বলছে, সঙ্গমের মাধ্যমেও
ছড়াতে পারে এই ভাইরাস।
উপসর্গ
গুটি বসন্তের
উপসর্গের সঙ্গে মাঙ্কি ভাইরাসের উপসর্গের মিল আছে। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে
জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশি ও হাড়ের জয়েন্ট ব্যথা এবং দেহে অবসাদ।
জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে অসংখ্য গুটি দেখা দেয়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি
হয়, পরে গুটি থেকে দেখা দেয় ক্ষত। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও
দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ
হয়ে ওঠেন।
মাঙ্কিপক্সের
চিকিৎসা
গুটি বা
জল বসন্তের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গের দিক থেকে সাদৃশ্য থাকায় অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে
এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন। চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রতিকার থাকলেও
এই বিরল রোগ নিরাময়ের এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই বলেই জানিয়েছেন
বিশেষজ্ঞরা। তবে যেকোনো প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা
যায়। গুটি বসন্তের টিকা ৮৫% কার্যকর বলে দেখা গেছে। মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা হিসেবে এখন
এই টিকাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
শনাক্তের
ইতিহাস
১৯৭০ এর
দশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময়
আফ্রিকার ১০টি দেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আফ্রিকার বাইরে প্রথম এই ভাইরাস
শনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে। মাঙ্কিপক্সের সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় নাইজেরিয়াতে
২০১৭ সালে।
নতুন করে
গত ৭ মে লন্ডনে প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস পাওয়া যায়। আক্রান্ত ওই
ব্যক্তি নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। সেখানেই কোনোভাবে তিনি আক্রান্ত হন বলে
ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। কানাডায় ১২ জনের অধিক মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে
দেশটির সরকার। এর আগে ইউরোপের দেশ স্পেন ও পর্তুগাল দাবি করেছিল ৪০ জনের অধিক রোগী
শনাক্ত করা হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স
ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ
মাঙ্কিপক্সের
উদ্বেগ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পড়লে এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের
কিছু নেই। ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের কর্মকর্তা ড. নিক ফিন বলছেন, এটা বুঝতে
হবে যে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস খুব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে না। সে কারণেই এখন পর্যন্ত
মাঙ্কিপক্স নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।
সূত্র: বিবিসি।
আরকে/এএল