নিজস্ব প্রতিবেদক

বেঙ্গল নিউজ টোয়েন্টিফোর


১৫ আগস্ট ২০২২ ০২:০৮



বিশ্বনেতাদের চোখে বিশ্বনেতার মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর

১৫ আগস্ট ২০২২ ০২:০৮

বিশ্বনেতাদের চোখে বিশ্বনেতার মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এক নিপীড়িত দেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা হিসেবে তিনি সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে শাহাদাৎ বরণের খবরে বিশ্বনেতারা হৃদয়ভাঙা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) চতুর্থ সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’ শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার খবর শুনে কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে। আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। ’ ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের কথা শোনার পর ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবের নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী জার্মান কূটনীতিক উইলি ব্রান্ট বলেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’

মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আমারই দেওয়া ট্যাংক দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবকে হত্যা করেছ! আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।’

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন বাংলাদেশি এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জাতির জন্য সবচেয়ে বড় শোকের ঘটনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও এটি অনেক বড় শোক।’

বঙ্গবন্ধুর মতোই নৃশংস হত্যার শিকার শ্রীলংকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবী উভয় শ্রেণির মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান। তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে। ’

ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’

ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। ’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর লন্ডন অবজারভার পত্রিকার ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইরিল ডুন তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন নেতা, যার রক্ত, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং জন্মের পুরোটা জুড়েই ছিল পূর্ণাঙ্গ বাঙালিত্ব।’

ব্রিটেনের সাবেক এমপি জেমসলামন্ডের বক্তব্য ছিল, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি। বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’

জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউণ্ডা বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’

মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রানৈতিক বৈরিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বরণের পর তিনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মত তেজী এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।’

এসএ/এইচকে