নিজস্ব প্রতিবেদক, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৫
শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার। ছবি:সংগৃহীত
আমির মাইনুল
ইসলাম ওরফে রক্সি ও শামিন যখন এক সঙ্গে জেলখানায় ছিলো তখন তারা সেখানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড
হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসে। এরপর তারা বিভিন্ন বিষয়ে
আলাপ-আলোচনা করে। এই তিনজন জেলখানায় বসে নতুন সংগঠনটি তৈরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা
হয় রক্সি ও শামিন জেলখানা থেকে বের হয়ে জঙ্গিদের নিয়ে শক্তিশালী একটি সংগঠন গঠন করবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, জামিনে বের হয়ে রক্সি ও শামিন কাজ শুরু করে। এভাবেই তৈরি হয় জামাতুল
আনসার ফিল হিন্দাল।
বৃহস্পতিবার
(২৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
বুধবার
(২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল
শারক্বীয়ার পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি’র
সিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
গ্রেপ্তাররা
হলেন— নাটোরের মো.আব্দুল্লাহ (২২), কুমিল্লার চান্দিনা মো. তাজুল ইসলাম (৩৩), নারায়ণগঞ্জ
মো. জিয়াউদ্দিন (৩৭), মাদারীপুরের মো. হাবিবুল্লাহ (১৯) ও নারায়ণগঞ্জ মাহামুদুল হাসান
(১৮)।
গ্রেপ্তারের
সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ফোন, ফতোয়া সংক্রান্ত ১২ পাতা কাগজ জব্দ করা হয়েছে।
সিটিটিসি
প্রধান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তাররা জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল
আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গঠনের পরিকল্পনা হয় কারাগারে। ২০১৭ সাল থেকে এ জঙ্গি
সংগঠনটি গঠনে কাজ শুরু করে এর সঙ্গে জড়িত মাস্টামাইন্ডরা।
এরই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণও শুরু হয় সংগঠনটির। সম্প্রতি সংগঠনটির
বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এ সংগঠনটির উদ্দেশ্য
কী তা এখনো জানা যায়নি।
আসাদুজ্জামান
আরও বলেন, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে
বেরিয়েছিলো। গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ ‘আনসার হাউজ’ পরিচালনা করতো। দেশের বিভিন্ন জায়গা
থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের যেসব সদস্য হিজরতের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যেত তাদের এই
আনসার হাউজে জায়গা দিতো আব্দুল্লাহ। পরে সেই আনসার হাউজ থেকে আব্দুল্লাহ নতুন জঙ্গি
সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে পাঠাতো।
এছাড়া নতুন
জঙ্গি সংগঠনের যেসব সদস্য আনসার হাউজে আসতেন তাদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে রিসিভ
করতেন গ্রেপ্তার তাজুল ও হাবিবুল্লাহ।
সিটিটিসি’র
প্রধান বলেন, গত আগস্টে কুমিল্লা থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে একযোগে সাত তরুণ ঘর ছাড়ে
হিজরতের উদ্দেশে। বিষয়টি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে সিটিটিসি তদন্ত শুরু করে। এর আগে
আবরার নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হিজরতের
উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছিল। ডাক্তার শাকের বিন ওয়ালী নামে এক জঙ্গি আবরারকে ঘর থেকে
বের করে নিয়ে এসেছিল। এরপর ডাক্তার শাকের বিন ওয়ালীকেও আমরা গ্রেপ্তার করি।
এই শাকের
বিন ওয়ালি হচ্ছে নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়া বিভাগের প্রধান। তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও
আরেক হুজুরের নির্দেশে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা কাজ করতো।
এই শাকের
বিন ওয়ালী প্রতি মাসে একবার করে বান্দরবান এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রশিক্ষণ শিবিরে
যেতেন। সেখানে তাদের কোনো সদস্য অসুস্থ বা রোগে আক্রান্ত হলে তিনি চিকিৎসা দিতেন। মূলত
নতুন জঙ্গি সংগঠনটির অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসা দিতে প্রতি মাসে তিনি একবার করে প্রশিক্ষণ
শিবিরে যেতেন। আবার তিনি যখন ঢাকায় থাকতেন তখন নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান শামিন মাহফুজ
ওরফে স্যারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন। ফোনে সদস্যদের অসুস্থতার লক্ষণ শুনে ব্যবস্থাপত্র
পাঠাতেন শাকের বিন ওয়ালী। এছাড়া জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকা পাহাড়ি
সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিনের সদস্যরা আহত হলে সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করতেন ডা. শাকের।
সিটিটিসি
প্রধান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে যতটুক জানতে পেরেছি সদস্যদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার
কথা চিন্তা করে তারা পার্বত্যাঞ্চলকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের
উদ্দেশ্য যেটা বুঝা যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে তারা পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সমতল
ভূমিতে এসে হামলা করে আবার যেন নিরাপদে পার্বত্যাঞ্চলের ক্যাম্পে ফিরে যেতে পারে।
এই সংগঠনের
কতজন সদস্য হিজরতের নামে নিখোঁজ রয়েছে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমাদের কাছে
থাকা তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ৭০ জন সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।
আরেক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, শামিন মাহফুজ কলেজ পড়ার সময় সে শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে তাকে
শিবির করার অভিযোগে ক্যাডেট কলেজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার
সময় সে নিকট আত্মীয়র সংস্পর্শে জঙ্গিবাদে জড়ায়। এছাড়া তার স্ত্রীও জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে
জড়িত।
এলআই/এআর