কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২৬ এপ্রিল ২০২২ ১২:৪৬
শোনা যাচ্ছিল কয়েক মাস ধরেই; এবার
চূড়ান্ত ফয়সালাই হয়ে গেল। চার হাজার ৪০০ কোটি ডলারে প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ‘টুইটার’ কিনে নিচ্ছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। সোমবার রাতে মাস্কের হাঁকা
দামে রাজি হয়ে যায় টুইটারের পরিচালনা পর্ষদ।
ফেসবুকের
কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মাস্ক টুইটারে ব্যাপক সংস্কার আনতে চান। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়গুলোর আরও সুরক্ষিত করতে
চান তিনি। টুইটারকে আরও উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রেখেছেন তিনি। বলেছেন,
‘আমি আশা করব, আমার চূড়ান্ত সমালোচকও টুইটারে থাকবেন। মুক্তভাবে মত প্রকাশ বলতে আমি
এটাই বুঝি।’
ফোর্বস সাময়িকীর তথ্য অনুযায়ী, ইলন মাস্ক বর্তমানে
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। ইলেকট্রিক
গাড়ি ‘টেসলা’ তার মূল ব্যবসা। তবে মহাকাশে মোটা অংকের বিনিয়োগ রয়েছে ৫০ বছর বয়সী মাস্কের।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন
জানিয়েছে, টুইটারের পরিচালনা পর্ষদ আরও খানিকটা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু শেষমেশ তারা ৪৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবেই রাজি হয়ে যান।
বিবিসির
খবরে বলা হয়েছে, টুইটার বিক্রির খবরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম এরই মধ্যে ৪ শতাংশ
বেড়ে ৫০ দশমিক ৬২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যদিও শেয়ারপ্রতি ৫৪ দশমিক ২০ ডলার দিতে চেয়েছেন
মাস্ক।
মাস্ক টুইটার
কিনতে যাচ্ছেন, এমন খবর সামনে আসে গত এপ্রিলে। মাস্ক প্রথমে টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ
শেয়ার কিনে নেন। ওই সময় তাকে পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু
সেই আহ্বানে তিনি সাড়া দেননি। এরপর ১৪ এপ্রিল মাস্ক হঠাৎই পুরো টুইটারই কিনে নেওয়ার
প্রস্তাব দেন। যুক্তি হিসেবে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে সম্ভাবনা আছে, আমি তার
দ্বার খুলে দিতে চাই।’
কেন টুইটার
কিনলেন মাস্ক
এ ব্যাপারে
পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই; তবে গুঞ্জন কিংবা জিজ্ঞাসা আছে একাধিক। কারো কারো জিজ্ঞাসা, মাস্ক কি তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন
রাজনীতিতে পা রাখতে যাচ্ছেন! যদিও কয়েক দিন আগে মাস্ক বলেছেন, তিনি রাজনীতির বাইরে
থাকতে চান।
ইলন মাস্ক
নানা ইস্যুতে প্রায়ই মার্কিন সরকারের সমালোচনা করে থাকনে। তার টুইটার কেনার খবরে এরই
মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জেফ বেজোস তাঁকে খোঁচা দিয়ে
বলেছেন, ‘এবার কি চীন সরকার টুইটার থেকে বাড়তি সুবিধা পাবে?’ মাস্ক অবশ্য এর কোনো জবাব
দেননি।
বিবিসি বলছে,
টুইটারের মূল ব্যবসা হচ্ছে বিজ্ঞাপনভিত্তিক। মাস্ক তা বদলে ফেলতে চান। তার আগ্রহ মূলত
সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ব্যবসায়। তার দাবি, অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা
যায় পয়সা ছাড়াই। কিন্তু তিনি এই সেবা দিতে চান অর্থের বিনিময়ে। যদিও বাজার বিশ্লেষকদের
ভাষ্যমতে, মাস্কের এই ব্যবসার ধারণাটি একধরনের বাজির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া মাস্কের
পছন্দ ক্রিপটোকারেন্সি। সে ক্ষেত্রে তিনি হয়তো বিটকয়েনের ভার্চুয়াল লেনদেনকে সামনে
আনতে পারেন।
৪৪ বিলিয়নের
উৎস কী
চার হাজার
৪০০ কোটি ডলারের দুই তৃতীয়াংশই তার নিজস্ব সম্পদ থেকে আসবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাকিটা টুইটারের সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ হিসেবেও আসতে
পারে। যদিও প্রচলিত অধিগ্রহণ ফর্মুলার সঙ্গে একেবারেই মিল নেই মাস্কের এই রূপরেখার;
বরং উল্টো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন বিনিয়োগের বেশিরভাগ অর্থ আসে কোম্পানির সম্পদের বিপরীতে
ব্যাংকের ঋণ থেকে।
রয়টার্স
আরও জানায়, মাস্কের প্রস্তাবে যেসব
ব্যাংক সমর্থন দিচ্ছে, তারা টুইটারের বিপরীতে এর চেয়ে বেশি ঋণ দিতে রাজি হয়নি। যুক্তি
হিসেবে ব্যাংকগুলো বলছে, স্যান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সামাজিক মাধ্যম টুইটার এখন পর্যন্ত
আয়ের বড় কোনো উৎস তৈরি করতে পারেনি।