কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
০৯ নভেম্বর ২০২২ ১১:২৩
স্কুলমাঠে চলছে আলমগীর বাদশার সার্কাস। ছবি: বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
মাথার আঘাতে ভেঙে গুঁড়ো
হয়ে যাচ্ছে আস্ত ইট, জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের ভেতর দিয়ে নির্বিকার হেঁটে যাচ্ছেন মানুষ,
মাথার চুল দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল ঘুরপাক খাওয়ানো, ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়া, কবর
থেকে মৃত লাশের জ্যান্ত হয়ে বেরিয়ে আসা কী সম্ভব?
সার্কাসে সম্ভব।
বাস্তবে হয়তো নয়। অবাস্তব জগৎকে শত শত মানুষের হাজারো চোখের সামনে বাস্তব করে তোলার
শিল্পী আলমগীর বাদশা। নীলফামারী জেলার জলঢাকার বাসিন্দা তিনি।
সোমবার (৭ নভেম্বর)
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গ্রাম বাংলার হারিয়ে
যেতে বসা ঐতিহ্য সার্কাসের এই শিল্পী চমক লাগানো সব অসম্ভব কাজ করে মুগ্ধ করেন
গ্রামের শত শত মানুষকে।
কুড়িগ্রামের ভারতীয়
সীমান্ত ঘেঁষা কৃষিনির্ভর উপজেলা ফুলবাড়ী। বছরে দুবার প্রধান ফসল হিসেবে ধান
চাষে ব্যস্ত সময় কাটান এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ। বর্তমানে ফুলবাড়ীর মাঠে
মাঠে হেমন্তের বাতাসে আমনের খেতে দোল খাচ্ছে আধা পাকা ধানের শীষ। আর কয়েক দিন পরেই
ধান ঘরে তুলতে গোটা উপজেলাজুড়ে শুরু হবে মহাকর্মযজ্ঞ। তবে সে তো কয়েক দিন পরের
কথা। এখন কিন্তু সবাই মোটামুটি অবসরে। কী করা যায়, কী করা যায়, এই যখন ভাবনা, ঠিক তখনই বিনোদনের খোরাক মেটাতে হাজির সার্কাসের ফেরিওয়ালা
আলমগীর বাদশা। এ পর্যন্ত তিনি উপজেলার বেশকিছু এলাকায় সার্কাস দেখিয়েছেন। তার চোখ
ধাঁধানো সার্কাস দেখতে সব জায়গাতেই নামছে জনতার ঢল।
ফুলবাড়ীতে আলমগীর বাদশার
সার্কাস দেখতে জনতার ঢল নামে স্কুল মাঠে। তার সার্কাস দেখে দর্শকরা আনন্দ
প্রকাশ করেন। তাদের মন্তব্য, আলমগীর বাদশা লা জওয়াব।
খোলা মাঠে সার্কাসের একেকটি
আইটেম শেষ হওয়ার পরপরই তুমুল করতালিতে ফেটে পড়েন জনতা। গ্রামবাসী যার যার সার্মথ্য
মতো আলমগীর বাদশাকে নগদ অর্থ উপহার দেন।
সন্ধ্যা নেমে এলে শেষ
হয় সার্কাসের খেলা। বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোরকে আলমগীর বাদশা বলেন, আবহমান
গ্রাম বাংলার মানুষের বিনোদনের খোরাক মেটাতে একসময় সার্কাসের ভূমিকা ছিল অন্যতম।
কালের বিবর্তন ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্প এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই
করছে। আমরা যারা এখনো ভালোবাসার টানে সার্কাসের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছি তাদের
মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের
সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোতে বিপুল জনপ্রিয় এই সার্কাস শিল্পী আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে
সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। নিরুপায় হয়ে এই পেশাকেই
আঁকড়ে ধরে আছি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাটবাজারে, স্কুল মাঠে, মানুষের বাড়ির
উঠানে সার্কাস দেখিয়ে যা রোজগার করি তা
দিয়েই কোনেমতে সংসারের খরচ চালাই। এভাবে দিনাতিপাত করা খুব কষ্টের।
সার্কাসের গৌরবময় দিন
ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সার্কাস শিল্পীদের কষ্টের অবসান ঘটাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা
চেয়েছেন আলমগীর বাদশা।
এফএম/