কনটেন্ট ক্রিয়েটর, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২৫ এপ্রিল ২০২২ ০২:৫৯
রাশিয়া কি
শেষমেশ ইউক্রেনে হামলা চালাবে- আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে
দাঁড়িয়েছে। আর রাশিয়া ইউক্রেনে কী চায়, সে জিজ্ঞাসাও কোটি মানুষের। প্রথম প্রশ্নের
জবাব হয়ত সময়ই বলে দেবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব এক কথায় বলতে গেলে রাশিয়া আসলে নিজেদের
ঘাড়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের উপস্থিতি দেখতে চায় না।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক
গণমাধ্যম বিবিসি’র এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং
নেটোর মতো পশ্চিমাদের সামরিক জোটে ঢুকতে না পারে, সেই চেষ্টা রাশিয়া বহুদিন ধরেই করছে।
নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাশিয়ার মূল দাবি কিংবা চাওয়া হলো, ইউক্রেনকে কখনই নেটো
সামরিক জোটে নেওয়া যাবে না।
ইইউ ও রাশিয়া-
উভয়ের সঙ্গেই সীমান্ত রয়েছে ইউক্রেনের। কিন্তু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হওয়ার
কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ঐতিহাসিক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। রুশ
ভাষা সেদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ২০১৪ সালে যখন ইউক্রেনে রুশপন্থী প্রেসিডেন্টকে
ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, রাশিয়া সৈন্য পাঠিয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া দখল
করে নেয়। একই সময়ে রাশিয়ার সাহায্যে জাতিগত রুশ বিদ্রোহীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে
বড় একটি এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তখন থেকেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেন
সেনাবাহিনীর থেমে থেমে লড়াই চলছে, যাতে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে।
রাশিয়া
বলছে নেটোর সঙ্গে সম্পর্কের একটি চূড়ান্ত ফয়সালা করার সময় এসেছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সের্গেই রিবাকখভের বক্তব্য হলো, ‘ইউক্রেন কখনই যেন নেটোর সদস্য না হতে পারে, সেটা নিশ্চিত
করা আমাদের জন্য আবশ্যক।’ অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন, ‘ইউক্রেন নেটোর
সদস্য হলে এই সামরিক জোট ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’ পুতিনের যুক্তি
হলো, ‘ধরে নিন ইউক্রেন নেটোর সদস্য হলো এবং ক্রিমিয়া নিয়ন্ত্রণে নিতে যুদ্ধ শুরু করলো।
তখন কি আমরা নেটোর সঙ্গে যুদ্ধ করব? কেউ কি এ নিয়ে কখনো ভেবেছে? আমার তা মনে হচ্ছে
না।’
রাশিয়ার
অভিযোগ, নেটো ইউক্রেনকে বহু অস্ত্র দিচ্ছে এবং রাশিয়ার অগ্রগতি থামাতে উত্তেজনা তৈরিতে
যুক্তরাষ্ট্র হাওয়া দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এও বলেছেন, ‘রাশিয়ার আর নড়াচড়ার
জায়গা নেই। তারা কি মনে করে যে আমরা এরপরও চুপ করে বসে থাকব?’
রাশিয়া
বলছে, ১৯৯৭ সালের আগে নেটোর যে সীমানা ছিল, সেখানে এই জোটকে ফিরতে হবে। পূর্ব ইউরোপে
নেটোর সম্প্রসারণ এবং সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তার অর্থ হলো, পোল্যান্ড এবং সাবেক
তিন সোভিয়েত রিপাবলিক লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া এবং লাতভিয়া থেকে নেটোর সৈন্য সরাতে
হবে এবং পোল্যান্ড এবং রুমানিয়ার মতো দেশ থেকে নেটোর মোতায়েন করা ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে
ফেলতে হবে।
প্রেসিডেন্ট
পুতিনের কথা হলো, ১৯৯০ সালে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নেটো আর এক ইঞ্চিও
পূর্ব দিকে এগোবে না। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতির তোয়াক্কা করেনি।
সোভিয়েত
ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগেই মিখাইল গর্বাচভকে কথিত সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিক
ওই যুক্তিতে রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করেছিল। ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ
ছিল। পুতিন মনে করেন, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার কারণে ঐতিহাসিক রাশিয়ার
মূল ভূখণ্ডও হাতছাড়া হয়ে গেছে। গত বছরও তার এক লেখায় পুতিন বলেন, ‘রুশ এবং ইউক্রেন
অভিন্ন জাতি, কিন্তু ইউক্রেনের বর্তমান নেতৃত্ব একটি রুশবিরোধী প্রকল্প চালাচ্ছে।’