উজ্জল হোসেন, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
২৫ মে ২০২২ ০৪:৪৯
ছবি : উইকিমাইকি
পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি উদ্বেগজনক
হারে বাড়ছে। পানি বাড়ছে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধলেশ্বরীসহ দেশের ৮৫টি
নদ-নদীতে। এরই মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ফরিদপুর ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বেশ
কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব জেলার মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি
লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায়
এই পাঁচ জেলায় অন্তত ১২ হাজার ৪২১ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিলেট
বন্যায় এই জেলায় বোরো ধান, আউশের বীজ তলার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন
সবজির ক্ষেতও ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ বাদাম ক্ষেত। বন্যার পানি ঢুকেছে বসতবাড়িতেও।
কালবৈশাখী আর পাহাড়ি ঢলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেটবাসী। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
হিসাব বলছে, বন্যায় বোরো ধানের এক হাজার ৭০৬ হেক্টর, আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৬০০
হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।
বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলের সঠিক হিসাব করা না গেলেও কৃষি
সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আনুমানিক ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাদাম ও সবজি মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। সিলেটের মৎস্য কার্যালয়ের
তথ্যমতে, জেলার ১১টি উপজেলার আট হাজার ৩২২টি পুকুর, দীঘি ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভেসে গেছে এক হাজার ৩৩৭ মেট্রিকটন মাছ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৮৫৪ হেক্টরের (এক
হেক্টর সমান সাড়ে সাত বিঘা) বেশি জলাশয়, যা টাকার হিসাবে অন্তত ৬ কোটি ৭৪ লাখ। বন্যায়
৭ হাজার ২৫১ জন মৎস্য চাষী ও খামার মালিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
নেত্রকোনা
নেত্রকোনায়ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর
জমি। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণেই ফের বন্যার কবলে পড়েছে নেত্রকোনা।
জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ হেক্টর
জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে ১
লাখ ৬৮ হাজার ৫২ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ৪৩২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের
দাবি, এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে। নেত্রকোনার কমলাকান্দারে ২০০ হেক্টর, মোহগঞ্জের
১৩২ হেক্টর, বারহাট্টার ৭০ ও সদরে ৩০ হেক্টর জমির বোরো ধানের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
এসব উপজেলায় ২ হাজার ১৬০ মেট্রিকটন (এক মেট্রিকটন সমান প্রায় সাতাশ মণ) ধান উৎপাদন
হতো বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সুনামগঞ্জ
দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না হাওড়ের চাষিদের। ভারী বৃষ্টি
আর উজানের ঢলে বিপাকে হাওড়ের চাষিরা। বন্যার পানিতে হাওড়ের অনেক ফসল তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে এবার
ছোট-বড় ১৩৭ টি হাওড়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত মাসে পাহাড়ি ঢলে ২০টি হাওড়ের প্রায় ৬
হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাওড়ের ভেতরের দিককার জমির ধান কাটা হয়ে গেছে।
তবে হাওড়ের উপরের অংশের সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি আছে। এসব ধান ঘরে তুলতে
কৃষকের আরও দিন পনের লাগবে। এরই মধ্যে বন্যায়
৭২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাদাম ৭০ হেক্টর, আউশ ধান ৪৮
হেক্টর ও ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, টানা বৃষ্টিতে মানুষ ধান মাড়াই ও শুকানো
নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বাড়িতে এক সপ্তাহের বেশি ভেজা ধান স্তূপ করে রাখলে সেগুলো নষ্ট
হয়ে যেতে পারে । বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলে ভেজা ধান নষ্ট হবে না।
ফরিদপুর
পদ্মায় কয়েক দিন ধরেই পানি বাড়ছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় শ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ১০০ হেক্টর বাদাম ক্ষেত। এছাড়া রয়েছে তিল ও ধানক্ষেত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ফরিদপুরে এ
বছর ৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এছাড়া ৫ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল
ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিলের আবাদ
বেশি হয়েছে। হঠাৎ পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান ক্ষেত তলিয়ে
যায়।
কুড়িগ্রাম
টানা বৃষ্টিপাতে নীচু জমির বোরো ধান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পূবালী বায়ু চাপের
কারণে গত বছরের তুলনায় এপ্রিল ও মে মাসে সর্বাধিক ৯৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা
হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৭২ মিলিমিটার
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ
বিভাগের তথ্যমতে, গত দুই মাসের টানা বৃষ্টিপাতে ৪১২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে
তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে বোরো ধান ২৬৫ হেক্টর, পাট ৯৫ হেক্টর, চিনা ২০ হেক্টর, শাকসবজি
১২ হেক্টর, তিল ১০ হেক্টর, কাউন ৫ হেক্টর ও
রাধুনী হর্স ৫ হেক্টর। টাকার হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে
বলে ধারণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
ইউএইচ/এএল