উজ্জল হোসেন, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
০১ জুন ২০২২ ১২:৩০
প্রতীকী ছবি
দেশে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি প্রাণীখাদ্যের দামও বেড়েছে। তাতে
চরম বিপদে পড়ার কথা জানিয়ে খামার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিন মাসে প্রাণীজ খাদ্য, ওষুধ
ও ভ্যাকসিনসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে এখন আকাশছোঁয়া। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন বড়
অংকের লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
একদিকে করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে দেশে
গম আমদানি ঘাটতি ও সয়ামিলের রপ্তানি চালু রাখার প্রভাবে প্রাণিখাদ্যের দামে উল্লম্ফন
ঘটেছে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাবে, গত
দুই বছরে দেশে সয়ামিলের দাম বেড়েছে ৮৮ শতাংশ। পাশাপাশি অন্য কাঁচামালের দাম বেড়েছে
১২৩ শতাংশ। কাঁচামালের দাম বাড়ায় বড় ফিড মিলগুলো তাদের উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়েছে।
ফিড তৈরিতে প্রয়োজন হয় ভুট্টা ও সয়ামিল। গত আগস্টে কেজি প্রতি
সয়ামিলের দাম যেখানে ৫৪ টাকা ছিল, সেখানে গেল মার্চে দাম হয়েছে ৭০ টাকা। দীর্ঘ চারমাস
ধরে সয়ামিল রপ্তানি বন্ধ থাকার পর ৬ ফেব্রুয়ারি ফের রপ্তানি শুরু করলে দাম বেড়ে যায়।
তাছাড়া ভারত হঠাৎই সয়ামিল আমদানি শুরু করলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা লাভের আশায় রপ্তানির
দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে সয়ামিলের দাম আরও চড়েছে।
ফিড ইন্ডস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, প্রাণিখাদ্যের ৮০ শতাংশ
কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। প্রধান কাঁচামাল সয়ামিল ও ভুট্টার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সয়ামিলের
প্রতি কেজি এখন দাম ৬৬ থেকে ৭০ টাকা যা পূর্বে ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। বিশ্ববাজারে ভুট্টার দাম ৪০ ডলার
বেড়ে হয়েছে ১২০ ডলার।
বিপিআইসিসি বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ফিড মিল বন্ধ
হয়েছে। লোকসানে ব্যবসা টানতে না পেরে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি খামারি তাদের উৎপাদন বন্ধ
করে দিয়েছে।
এদিকে ছয় মাসে গো-খাদ্যের যে দাম ছিল, তার দাম এখন দ্বিগুণ বেড়েছে।
গত পাঁচ মাসে এই দাম ধীর গতিতে বাড়লেও সম্প্রতি দামে উলম্ফন দেখা দেয়। ঈদের আগে এই
দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে খামারি ও ব্যাপারীরা। তারা জানিয়েছে,
গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে এবার কোরবানির পশুর বাজার চড়া হতে পারে।
কোরবানি ঈদ এখনও মাস খানেক বাকি। গরু মোটাতাজাকরণে প্রয়োজনীয়
খাদ্য গম ও মাষকলায়ের ভুসির দাম দুই সপ্তাহে বেড়েছে মণপ্রতি ২০০ টাকা।
কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গরুর খাদ্যের দাম
খুব বেশি বেড়ে গেছে। তিন মাস আগে যে ভুসির দাম ছিল ১৪শ টাকা। এখন সেই ভুসি ২২শ টাকায়
কিনতে হচ্ছে।’
কোরবানির পশুর চাহিদা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের
কাছে কোন স্পষ্ট তথ্য নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, ১০ মে জেলা ও উপজেলাতে চিঠি
পাঠানো হয়েছে। এটা আসতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগবে। তবে দেশে কোরবানির গরুর সংকট নেই।
এবার গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঈদে কোরবানির গরুর দাম বাড়বে বলে ধারণা কছে সরকারি
এই সংস্থা।
অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত কোরবানির ঈদে সারা দেশে পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৯ লক্ষ ১৬ হাজার। এর মধ্যে গরু-মহিষ ছিল ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ছিল ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ও অন্যান্য পশু ছিল ৪ হাজার ৭৬৫ টি।
ইউএইচ/আরআর