জান্নাতুল ফেরদৌস, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
১০ মে ২০২২ ০৩:০৫
প্রতীকী ছবি
রসালো ফলের
মৌসুমে লিচুর স্বাদ কে না নিতে চায়! প্রতি বছরই এ ফলের চাহিদা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে
না উৎপাদন। গাছের বয়স, আবহাওয়া কিংবা বাগান রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিষয়ের ওপর লিচুর ফলন
নির্ভর করে। ভারতের কৃষিভিত্তিক ‘এগ্রিফার্মিং’ জানাচ্ছে লিচুর ফলন বাড়ানোর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ের কথা—
১. জলবায়ু
ও মাটি
লিচু পরিপক্কের
সময় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা ২১ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত
ওঠানামা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় লিচুর ফলন ভালো হয়। আর্দ্র
জলবায়ু, মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত, ঠাণ্ডা ও উষ্ণ বাতাস লিচু চাষের জন্য আদর্শ।
২. বছরজুড়েই
পরিচর্যা
গাছের শক্তি,
বেড়ে ওঠা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য লিচু গাছের প্রায় সারাবছরই পর্যাপ্ত পরিচর্যা
প্রয়োজন। তাছাড়া মৌমাছি পালনের মাধ্যমে লিচুর
উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। অনেক সময় ফল ফেঁটে গিয়ে, ফুল ঝরে কিংবা রোদে
পুড়ে ফলন কমে যায়। মানসম্পন্ন লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণের জন্য
উপসর্গ জানার পাশাপাশি রোগ নির্ণয় জরুরি।
৩. আলো
বেশি রোদে
লিচুর ফলন বাড়ে। কিন্তু রোদের সঙ্গে গাছ খাপ খাইয়ে নিতে পারছে কি না, সে বিষয়ে খেয়াল
রাখতে হবে। অল্প বয়স্ক গাছ, যেগুলো তপ্ত রোদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেগুলোর দিকে
বিশেষ নজর রাখতে হবে। ধীরে ধীরে অল্প বয়স্ক গাছগুলোকে তীব্র আলোর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে
হবে। আর একবার অভিযোজিত হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে গাছগুলোর ফলন বাড়বে।
৪. চারা
লিচু গাছের
বংশবৃদ্ধির জন্য এয়ার লেয়ারিং বা স্তরবিন্যাস হল সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। স্তরবিন্যাস
বলতে ১ বছর বয়সী একটি গাছের কুঁড়ির
নীচে থেকে ২ সেন্টিমিটার পরিমাণ চওড়া ছাল ছাড়ানো হয়। এটাকে
একটি মাটির বল দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়, যেখানে একটি পলিথিনের শিটে ‘স্প্যাগনাম’
শ্যাওলা দেওয়া থাকে। উভয় প্রান্ত একটি পাতলা দড়ি বা রাবারের ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে
দেওয়া হয়, যাতে বাতাস প্রবাহ প্রায় বন্ধ থাকে। দুই মাসের মধ্যে পর্যাপ্ত শিকড় তৈরি
হলে ডালটি মাটির নীচে কেটে নার্সারিতে স্থাপন করা হয়। এ জন্য জুলাই-অক্টোবর সেরা সময়।
বর্ষাকালে স্থায়ী জমিতে কমপক্ষে ছয় মাস বয়সী গাছ লাগাতে হয়।
৫. অনিয়মিত
ফলদান
লিচু চাষাবাদে
দুর্বল বা অনিয়মিত ফলন খুবই পরিচিত সমস্যা। সাধারণত চলতি বছরের কিছু গাছের উৎপাদন
পরের বছর বৃদ্ধি (৭০-৯৫%) পেয়ে থাকে। তবে দেরিতে সার প্রয়োগ, হাই ফ্রিকোয়েন্সি এবং
ফুল ফোটার ঠিক আগে ভারী সেচ দেওয়ার মতো কারণে ফলন অনিয়মিত হয়ে যায়।
৬. ছাঁটাই
লিচু গাছের
মৃত ও রোগাক্রান্ত শাখা নিয়মিতভাবে ছাটাই করতে হয়। এতে গাছের কাণ্ড ও মুকুল বৃদ্ধি
পায়। গাছ ঘন হলে ফলন কমে যায়। এ কারণে ডালপালা, প্রয়োজনে গাছ কেটে হলেও বাগানে পর্যাপ্ত
আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. পর্যাপ্ত
পানি
সারাবছর
গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে ২-৩ দিনের ব্যবধানে সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
অল্প বয়স্ক গাছের ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে এবং শীতকালে ৩ থেকে ৫ দিনের ব্যবধানে সেচ
দিতে হবে।
৮. ফুল
ও ফল ঝরা নিয়ন্ত্রণ
অনেক সময়
দেখা যায় ফুল ও ফল ঝরে পড়ছে। ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়া, পুষ্টি ও হরমোনজনিত নানা কারণে
এমন পরিস্থিতি হতে পারে। ফলের বৃদ্ধি ও বিকাশের পর্যায়ে ‘ভার্মিওয়াশ’ ২ থেকে ৩ সপ্তাহে
স্প্রে করে লিচুর ঝরে পড়া রোধ করা যায়।
৯. সার
ও কীটনাশকের ব্যবহার
ফুল ফোটার
আগে নাইট্রজেন সারের অত্যধিক ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। সাধারণভাবে রাসায়নিক সারের
চেয়ে উচ্চ জৈব সারের ব্যবহারে ফলন যেমন ভালো হয়, তেমনি মানও বজায় থাকে।
১০. ফলে
ফাটল
লিচুতে ফাটল
ধরলে চাষী অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। এ পরিস্থিতি এড়াতে ক্যালসিয়াম,
জিঙ্ক ও ম্যাঙ্গানিজের সঠিক ব্যবহার জরুরি। জমিতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে বাগানে পর্যায়ক্রমে সেচ দিন।
সূত্র :
এগ্রিফার্মিং
জেডএস/আরআর