ডেস্ক রিপোর্ট, বেঙ্গলনিউজ টোয়েন্টিফোর
১৭ আগস্ট ২০২৩ ০২:৫১
ছবি : সংগৃহীত
পৃথিবীতে
এমন একটি রহস্যময় ও বিচ্ছিন্ন জায়গা আছে যেখানে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের কোনো চিহ্ন
নেই। এই জায়গাটির নাম পয়েন্ট নিমো। আজ পর্যন্ত এই জায়গায় কেউ পৌঁছাতে
পারেনি। এটা প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানের একটি স্থানের নাম। যা দক্ষিণ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া
ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান। তবে এটা কোনো দেশের মধ্যে পড়ে না। সেখানে কোনো প্রাণী
বা গাছপালা নেই।
পয়েন্ট
নিমো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অগম্যতার সমুদ্রের মেরু’ বা ভূমি থেকে সবচেয়ে দূরে সমুদ্রের
বিন্দু হিসেবে পরিচিত। মেরুর সবচেয়ে কাছের ল্যান্ডমাসগুলো হলো উত্তরে পিটকেয়ার দ্বীপপুঞ্জের
একটি, উত্তর-পূর্বে ইস্টার দ্বীপপুঞ্জের একটি ও দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকার উপকূলের একটি
দ্বীপ। পয়েন্ট নিমোর কাছাকাছি কোথাও কোনো মানুষের বসবাস নেই। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা
স্থানটির নাম ল্যাটিন ভাষায় ‘নিমো’ রাখেন। যার অর্থ ‘কেউ না’।
১৯৯২ সালে
ক্রোয়েশিয়ান জরিপ প্রকৌশলী হ্রভোজে লুকাতেলা প্রশান্ত মহাসাগরে সঠিক বিন্দু খুঁজে
বের করার জন্য যাত্রা করেছিলেন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে। হঠাৎ করেই তিনি ভূমি
থেকে সবচেয়ে দূরের নিমো নামক স্থানটির খোঁজ পান। তবে তিনিও কখনো এই স্থানটি পরিদর্শন
করেননি। ধারণা করা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ কখনোই পয়েন্ট নিমোর সঠিক স্থানাঙ্কের
মধ্য দিয়ে যায়নি।
পয়েন্ট
নিমোর স্থানাঙ্কগুলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় গায়ারের মধ্যে পড়ে। যা বিশাল ঘূর্ণায়মান স্রোত। সেখানে বিশুদ্ধ পানিরও উৎস নেই। ফলে কোনো খাদ্য উৎস ছাড়া,
সমুদ্রের এই অংশে বেশিরভাগ জীবন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। তবে বিজ্ঞানীরা পয়েন্ট নিমোতে সমুদ্রতলের
আগ্নেয়গিরির ভেন্টের কাছে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি ব্যাকটেরিয়া ও ছোট কাঁকড়া নথিভুক্ত
করেছেন।
এই স্থানটি
নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলেন যখন তারা সমুদ্রের মেরুর
কাছে রেকর্ড করা সবচেয়ে জোরে পানির নিচের শব্দ শনাক্ত করেন তখন। ৩০০০ মাইলেরও বেশি
দূরে পানির নিচের মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দটি ধরা পড়ে। আমেরিকার ন্যাশনাল ওশেনিক
অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর বিজ্ঞানীরা এত বড় আওয়াজটি
কীসের হতে পারে তা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। আর এই রহস্যের নাম দেন ‘দ্য ব্লুপ’। পরে
অবশ্য জানা যায় ‘দ্য ব্লুপ’ ছিল অ্যান্টার্কটিকার বরফ ভাঙার শব্দ।
পরবর্তী সময়ে পয়েন্ট নিমোর আশপাশের এলাকাটিকে ‘স্পেসশিপ গ্রেভিয়ার্ড’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। যেহেতু
স্বায়ত্তশাসিত স্পেসশিপ, স্যাটেলাইট ও অন্যান্য স্পেসের আবর্জনাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের
জন্য ভালো নয়, তাই বিজ্ঞানীরা এমন একটি এলাকা নির্বাচনের বিবেচনা করেন যেখানে মানুষের
বসবাস নেই ও উড়ন্ত মহাকাশ ধ্বংসাবশেষ যাতে কারো ক্ষতি করতে না পরে।
সবদিক বিবেচনা
করে নাসা ১৯৭১ সাল থেকে নিমো নামক স্থানটি স্পেসশিপের কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু
করে। এরপর রাশিয়ান মির স্পেস স্টেশন ও নাসার প্রথম মহাকাশ স্টেশন, স্কাইল্যাবসহ বিশ্বের
সেরা কিছু মহাকাশযানের ২৬৩টিরও বেশি আবর্জনা এই অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। এমনকি ২০৩১
সালে যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি বিধ্বস্ত হবে, তখন সেটার ধ্বংসস্তূপও নিমোতে
ফেলা হবে।
সূত্র: অল
দ্যাট ইন্টারেস্টিং
জেডএস/